রাজধানীর লালমাটিয়ায় অভিজিৎ রায়ের বইয়ের এক প্রকাশকসহ তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখমের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিহত এই লেখকের আরেক প্রকাশককে একই কায়দায় হত্যা করেছে জঙ্গিরা।
নিহত ফয়সল আরেফিন দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক ও লেখক আবুল কাসেম ফজলুল হকের একমাত্র ছেলে। তার মালিকানাধীন জাগৃতি প্রকাশনী অভিজিতের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামের জনপ্রিয় বইটি প্রকাশ করেছিল।
৩১ অক্টোবর শনিবার বিকালে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় নিজের কার্যালয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দীপনকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের এডিসি মো. জসিম বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নিজের অফিস থেকে দীপনকে রক্তাক্ত অবস্থায় বের করা হয়।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে দীপন মারা গেছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
জাগৃতি প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অফিসে গিয়ে স্যারকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তার ঘাড়ে কোপের চিহ্ন ছিল।”
পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, “এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। একাধিক ব্যক্তি এ হত্যায় অংশ নিয়েছিল বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।”
দায় স্বীকার ‘আল-কায়েদার’
আনসার আল ইসলাম নামে একটি টুইটার একাউন্ট থেকে এক টুইটে বাংলাদেশে প্রকাশকদের উপর হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে। নিজেদের আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস) দাবি করে ওই টুইটে বলা হয়েছে, “আমরা, আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এই অপারেশনের দায় স্বীকার করছি।”
শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়া ও শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বর ও জাগৃতির অফিসে হামলা হয়।
হামলায় জাগৃতির মালিক ফয়সল আরেফিন দীপন নিহত হন। রাত ৯টার দিকে আনসার আল ইসলাম নামে অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে দায় স্বীকারের এই বার্তা দেওয়া হয়।
জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার ছয় বছর পর আটজনের মৃত্যুদণ্ড
২ নভেম্বর ২০১৫ দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের আট জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র জমা দেন।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়।
২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হত্যার সাথে জড়িত আট আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়।
এরা সবাই জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে জানানো হয়। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত মেজর জিয়াউল হক জিয়াও রয়েছে।মামলায় অভিযুক্ত ৮ আসামির মধ্যে দুই জন পলাতক রয়েছেন। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। রায়ের আগে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়।
নিহত দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমান এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে এই রায় দ্রততম সময়ে কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ:
জিহাদের অংশ হিসেবে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলাম বা আনসার উল্লা বাংলা টিমের সদস্যদের যারা এই মামলার আসামী তাদের লক্ষ্য ছিল, ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া।
এছাড়া মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বিঘ্নিত করাও লক্ষ্য ছিল বলে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন।
বিবিসি বাংলা । দ্য ডেইলি স্টার । দ্য ডেইলি স্টার । প্রথম আলো