পদ্মার পাড়ে ঘুরতে যাওয়া মানুষদের মোটরসাইকেল রাখার নামে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানি ও চাঁদাবাজি করে আসছেন স্থানীয় শান্ত ও তার দলবল। এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হন জাতীয় পত্রিকার দুই সাংবাদিক। তাদের সেখানে আটকে রাখা হয়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা হেল্পলাইন ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে রক্ষা পান তারা।
লাঞ্ছনার শিকার ওই দুই সাংবাদিক হলেন-দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের ব্যুরোপ্রধান মো. আল-আমিন হোসেন ও দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার ব্যুরোপ্রধান শাহিনুর রহমান সোনা।
সোমবার (৮ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বড়কুঠি কফিবারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন ওই দুই সাংবাদিক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
তিনি জানান, সাংবাদিক শাহিনুর ও তার সহকর্মী আল-আমিন পেশাগত কাজে স্থানীয় রেস্তোরাঁ ‘কফিবার’-এ যান। সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শান্ত ও তার এক সহকর্মী টিকিট দিতে আসেন। টিকিট না নেয়ায় চাঁদাবাজ শান্ত ও আরও দু-তিনজন লোক মোটরসাইকেল তাদের গ্যারেজে রাখার জন্য জোর খাটান। সংবাদের জন্য কিছু ছবি ও সাক্ষাৎকার নিয়ে দু-এক মিনিট পরই চলে যাওয়ার কথা বলেন ওই দুই সাংবাদিক। তারপরও তারা টিকিট নিতে জোর খাটান। সাংবাদিক আল-আমিন তাদের এ অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করলে তারা একপর্যায়ে গায়ে হাত তোলেন ও গালিগালাজ করেন।’
তিনি আরও জানান, শান্তর হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনে উপায় না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা নেন সাংবাদিক শাহিনুর। খবর পেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ দেখে তাৎক্ষণিক সটকে পড়েন শান্ত ও তার দলবল। পরে সাংবাদিক আল-আমিন ও শাহিনুরকে উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে থানায় এসে তাদের (শান্ত ও তার দলবল) নামে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা।
সাংবাদিক আল-আমিন ঘটনার বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা পাড়ের বিনোদনবিষয়ক একটি নিউজের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো গ্যারেজ নেই। তার পরও শান্ত নামের এক ব্যবসায়ী জোরপূর্বক সেখানে গ্যারেজের নামে টাকা তোলেন, যা অবৈধ। তার গ্যারেজের বাইরে কফিবারে বাইক রাখার পরও তার কাছে সামান্য সময় চাওয়া হয়। কিন্তু শান্ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাদের বলেন, ‘সাংবাদিক আর পুলিশকে গ্যারেজে মোটরসাইকেল মাংনা রাখার জন্য ব্যবসা করছি না। টিকিট নিতে হবে, নাহলে বাইক নিয়ে এসেছেন ঠিকই, টাকা ছাড়া যেতে দিব না’।’
শান্ত আরও বলেন, ‘তোর কোন বাপ আছে, যা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কর, পারলে লেখালেখি কর। এর আগেও তোদের অনেক সাংবাদিক আমার বিষয়ে লিখেছে, আমার কিছুই করতে পারেনি।’
সাংবাদিক শাহিনুর রহমান সোনা জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপায় না দেখে ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশি সহায়তা নেই। পরবর্তীতে পুলিশ ও অন্যান্য সাংবাদিক ঘটনাস্থলে আসা দেখে শান্ত ও তার দলবল সেখান থেকে পালিয়ে যায়।’
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বলেন, ‘এমন ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনাটি জানার পর সেখানে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছিল। আজ সকালেও সেখানে পুলিশ গিয়েছিল কিন্তু ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক এবং অবৈধ গ্যারেজও বন্ধ করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, দ্রুত ঘটনার তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।