নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে গোপনে বিয়ে করেছেন- এমন দাবি করে কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসা সেই সাঈদা আক্তার শিউলি এবার খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন।  ১৬ মে রোববার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলার আসামি করা হয়েছে ফেরদৌসী আক্তার রেহেনা নামে এক মানবাধিকার কর্মীকেও। 

 

শিউলির দাবি, কাউন্সিলর খোরশেদ ও রেহেনা আক্তার ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেছেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে সমকালের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে শিউলির ভয়ংকর প্রতারণার কাহিনি। আগে তার আরও তিনটি বিয়ে হয়েছিল। প্রথম স্বামী ওসমান গনির সঙ্গে ১৫ বছর সংসার করেন। ওই সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় স্বামীর নাম জহির। ওই সংসারে তার একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

জহিরকে তালাক দিয়ে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর তারিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। বিয়ের মাত্র এক বছর পরেই শিউলি তারেকের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় যৌতুকের জন্য মারধর এবং প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তারেক ছয় মাস কারাভোগও করেন। পরে শিউলিই তারেকের জামিনের ব্যবস্থা করেন।

সর্বশেষ শিউলির নজর পড়ে কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদের ওপর। গত বছরের জুনে খোরশেদের স্ত্রী লুনা করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হন। সেই সময় তার অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। একই সময় কাউন্সিলর খোরশেদও করোনায় আক্রান্ত হন। সুস্থ হয়ে খোরশেদ করোনায় আক্রান্তদের বিনামূল্যে অক্সিজেট সার্পোট দেওয়ার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারের মজুদ গড়ে তোলেন। এ কাজে সহায়তার জন্য সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। খোরশেদের এই আহ্বান দেশের একটি অনলাইন পোর্টালে প্রচারিত হয়। তখন শিউলি ওই নিউজের নিচে খোরশেদের টিমকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেওয়ার আগ্রহের কথা জানান। খোরশেদ তার কাছ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারটি গ্রহণ করেন। তখন দু’জনের মধ্যে পরিচয় এবং তারা ফেসবুক বন্ধু হন। এক পর্যায়ে খোরশেদ জানতে পারেন শিউলি তারই ছোটবেলার বন্ধু মামুনের ছোট বোন। মামুন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে রয়েছেন। পরিচয়ের পর থেকে শিউলি খোরশেদের সঙ্গে ফোনে ও ম্যাসেঞ্জারে কথা বলতেন এবং চ্যাটিং করতেন। এক পর্যায়ে শিউলি খোরশেদকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এতে খোরশেদ হতবাক হয়ে পড়েন।

খোরশেদ বলেন, ‘এরপর থেকেই আমি তাকে (শিউলি) এড়িয়ে চলতে শুরু করি। কারণ আমার স্ত্রী ও তিনটি সন্তান রয়েছে। তার প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তাকে এড়াতে ফেসবুকে তাকে ব্লক করে দিই। এরপরেও তার অত্যাচার থেমে ছিল না। বাধ্য হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। এক পর্যায়ে গত ২১ জানুয়ারি শিউলি লোকজন নিয়ে আমাকে নগরের মাসদাইরের বাড়ি থেকে তুলে নিতে আসেন। তখন আমার লোকজন ও স্ত্রী লুনা আমাকে রক্ষা করেন। এরপরও থেমে থাকেননি শিউলি। তার অনবরত হুমকি-ধমকির কারণে গত ২৪ এপ্রিল আমি ফেসবুক লাইভে এসে শিউলির কবল থেকে মুক্তি পেতে নগরবাসী ও প্রশাসনের সহায়তা চাই। ওই সময় শিউলি দেশের বাইরে ছিলেন। আমার ফেসবুক লাইভের বিপরীতে তিনি বিদেশে বসেই একটি ভিডিওবার্তা নারায়ণগঞ্জের কিছু সাংবাদিকের কাছে পাঠান এবং আমাকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন। বিদেশ থেকে ফিরে তিনি বিয়ে সংক্রান্ত কাগজপত্র সাংবাদিকদের দেবেন বলে জানান।’

এদিকে শিউলির ভাই মামুন অস্ট্রেলিয়া থেকে ছোট বোনের এমন অপকর্মের কথা জানতে পেরে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন তার বন্ধুর (খোরশেদ) কাছে। তিনি শিউলিকে নানাভাবে এ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। শিউলির ছেলে-মেয়েরাও মায়ের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিব্রত বলে মামুনকে জানিয়েছেন। শিউলির বড় বোনের স্বামীও এ নিয়ে বিব্রত। অস্ট্রেলিয়া থেকে মামুনের কথপোকথনের এই রেকর্ডিং সমকালের কাছে রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাঈদা আক্তার শিউলি সমকালকে বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার পেট্রল পাম্প ও গার্মেন্ট আছে। আমার তিন ছেলে-মেয়ে রয়েছে। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আমাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই কাউন্সিলর খোরশেদ আমার পরিচিত। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর খোরশেদ আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। প্রথমে রাজি না হলেও পরে গত বছরের ২ আগস্ট আমার মালিকানাধীন সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরে এসএস ফিলিং স্টেশনে খোরশেদের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের কাজি খোরশেদই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। তাই এ মুহূর্তে আমি বিয়ের কাবিননামা দেখাতে পারছি না। বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় খোরশেদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন এবং আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন।’

শিউলি জানান, তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন কারণ খোরশেদ ও রেহেনা নামে এক নারী ফেসবুক লাইভে এসে তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন।

শিউলির এমন বক্তব্যের বিষয়ে কাউন্সিলর খোরশেদ বলেন, ‘বিয়ে হয়ে থাকলে কাবিননামা দেখাক। তাছাড়া সে একটি ভুয়া কাবিননামা তৈরির চেষ্টা করছে বলে জানতে পেরেছি। এজন্য এক আইনজীবীর সঙ্গে সে আলোচনাও করেছে।’

সমকাল

সেন্সরশিপের খড়গ

স্বাধীন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, টিভি নাটক, মঞ্চ নাটকের উপর বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি সেন্সরশিপের তথ্য উপাত্ত দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।

বিস্তারিত

লেখার জন্য কারাবন্দী

ফেসবুকে লেখালেখির জন্য জেলে আছেন প্রচুর মানুষ। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন, আছেন এমন মানুষও। তাদের সম্পর্কে জানুন।
বিস্তারিত

বিচারহীনতার বাংলাদেশ

বিচার হচ্ছে না নিকট অতীতের কয়েকশ চাঞ্চল্যকর মামলার। যেসব মামলার সম্ভাব্য আসামী প্রভাবশালী রাজনীতিক অথবা ব্যবসায়ী অথবা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কেউ।

বিস্তারিত

এখন কী অবস্থায় আছে?

ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে ডজনখানেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো। সেসব গ্রাম, গ্রামের মানুষেরা এখন কেমন আছেন?
বিস্তারিত