নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার আদলে নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচারের অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব সদরদপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, ২৮ নভেম্বর বুধবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গাজীপুরের টঙ্গী থেকে কামাল হোসেন (২৩) ও মো. আল আমিন (৩০) নামের ওই দুইজনকে তারা গ্রেপ্তার করেন।
মিজানুর রহমান বলেন, “বিভিন্ন পত্রিকার ওয়েবসাইটের আদলে নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে তারা মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রচার করে আসছিল।”
দুজনের মধ্যে কামালকে মোহাম্মদপুর থেকে এবং আলামিনকে টঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে আল আমিন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সিএসই পড়েছেন। আর কামাল কুমিল্লার নওয়াব ফয়েজুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিবিএ (ব্যবস্থাপনা) তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন।
পড়ালেখার পাশাপাশি তারা অনলাইনে আউট সোর্সিং, ডোমেইন-হোস্টিং বিক্রি, ওয়েব পেইজ ডিজাইন, সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টেকনিক্যাল সার্পোট দিয়ে আসছিলেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার দুইজন নির্বাচন সামনে রেখে অনলাইনে ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে ‘সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন করার’ চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। গত অগাস্টে নিরাপদ সড়কের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়িয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতেও তারা ভূমিকা রাখে।
সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইট নকল করে উদ্দেশ্যমূলক ভুয়া খবর প্রকাশের অভিযোগে এর আগে গত ২৪ নভেম্বর এনামুল হক নামের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব তাকে রিমান্ডেও নেয়।
র্যাবের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত এনামুল অন্তত ২২টি ওয়েবসাইট নকল করে সেগুলো চালাতেন। ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত এনামুল ওয়েবসাইট চালিয়ে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ সংগঠনের তহবিলে দিতেন।
নির্বাচন সামনে রেখে গত কয়েক মাস ধরে প্রথম আলো, বাংলা ট্রিবিউন, বিবিসি বাংলার মত বিভিন্ন নিউজ পোর্টালের আদলে বেশ কিছু ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
মূল ওয়েবসাইটের নামের সঙ্গে একটি হরফ যোগ করে দিয়ে একই রকম লোগো ও ইউআরএল ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে। সেসব ভুয়া খবর ফেইসবুকেও ছড়ানো হচ্ছে, ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছে পাঠক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ওয়েবসাইট bdnews24.com -এর ইউআরএল এর সঙ্গে অন্য ইংরেজি হরফ যোগ করে www.bdsnews24.com -এর মত বেশ কিছু ওয়েবসাইটও এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
র্যাব বলছে, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তের সূত্র ধরে বুধবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে বেশ কিছু ভুয়া ওয়েবসাইট পরিচালনার আলামত পাওয়া যায়।
পরে কামালের দেওয়া তথ্যে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আল আমিনের মাধ্যমেই কামাল তার ভুয়া ওয়েবসাইটের ডোমেইন হোস্টিং করিয়েছিলেন।
র্যবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তারা সরকারবিরোধী প্রপাগান্ডা ছড়ানোর কাজে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার হুবহু কপি তৈরি করে ডোমেইন নিত। সেখানে এমন সব ভুয়া খবর দেওয়া হত, যাতে ‘বিএনপি, জামাত বা সরকারবিরোধী সমর্থকরা’ বেশি লাইক শেয়ার দেয়।
“তাতে করে ফেইসবুক থেকে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব। সাধারণত কোনো পোস্টে এক হাজারের বেশি ভিউ, লাইক বা শেয়ার হলে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে দেয়, যা পরে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডোমেইন মালিকের হাতে যায়।”
কামাল ও আল আমিনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছে র্যাব।