জমি ভরাট নিয়ে প্রতিবেদন করায় কক্সবাজারে তিন সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ

কক্সবাজার সদরের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী উত্তর মুহুরীপাড়ার তিন ফসলির প্রায় ৬০ একর উর্বর জমি ভরাটের বিষয় নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন করায় তিন সাংবাদিককে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন ভূমিদস্যুতায় অভিযুক্ত এ এম জি ফেরদৌস।

 

বুধবার (১৭ মার্চ) এ এম জি ফেরদৌসের পক্ষ হয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী সাহাব উদ্দিন স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে লিগ্যাল নোটিশটি প্রকাশ করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা ও জাগো নিউজের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি সায়ীদ আলমগীর, আলোকিত কক্সবাজারের অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশ ওয়াহিদুর রহমান রুবেল এবং সমুদ্রকন্ঠ’র সম্পাদক ও প্রতিবেদক জসিম উদ্দীনের নামে প্রকাশ করা নোটিশে সংবাদটির বিন্দুমাত্র সত্যতা নেই বলে দাবি করে স্ব স্ব গণমাধ্যম থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। নাহলে তিনি ২০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করবেন বলে নোটিশে হুঁশিয়ারি দেন।

জানা গেছে, প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক), কৃষি অধিদফতরসহ বিভিন্ন জায়গায় দেয়া স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে করা। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তা ব্যক্তি ও কৃষি বিভাগের বক্তব্য রয়েছে। তারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন মহুরীপাড়ার তিন ফসলি অর্ধশতাধিক একর জমি ভরাট করার সরেজমিন সত্যতা পেয়েছেন। এরইমধ্যে কউক ঘটনাস্থলে তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে মাটি ভরাট বন্ধ করেছেন এমন বক্তব্য প্রকাশিত নিউজে সংযুক্ত রয়েছে।

এ বিষয়ে ইত্তেফাক ও জাগো নিউজ প্রতিনিধি সায়ীদ আলমগীর বলেন, ‘প্রকাশিত সংবাদে মিথ্যা তথ্য প্রচার হয়েছে এমন মনে করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনি নোটিশ দিতে এবং প্রেস আইনে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন, এটা উনাদের সাংবিধানিক অধিকার। তবে, সংবাদের কোন অংশ মিথ্যে তা সুনির্দিষ্ট করে দেয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশ করা আইনি নোটিশটাতে আইনজীবী মক্কেলের বরাত দিয়ে যে তথ্যগুলো উপস্থাপন করে নিউজটি প্রত্যাহার করতে বলেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়।’

সাংবাদিক সায়ীদ আলমগীর আরও বলেন, ‘উনি (নোটিশদাতা) দাবি করেছেন তার ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে অফিসে বসেই মনগড়াভাবে নিউজটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নিউজে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে ভরাটরত কৃষি জমির মালিকদের মাঝে ৩৩ জনের স্বাক্ষরে বিভিন্ন দফতরে দেয়া অভিযোগের তথ্যগুলো প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া একটি সরেজমিন পরিদর্শনের বিবরণের প্যারা রয়েছে। যেখানে মাটি ভরাট কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের বক্তব্য রয়েছে (তাদের বক্তব্য ও স্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাটের ভিডিও সংরক্ষিত আছে)। আইনজীবী আরও দাবি করেছেন তার মক্কেলের বক্তব্য নেয়া হয়নি এবং অভিযুক্ত এলাকার পরিবর্তে ভিন্ন এলাকার চিত্র প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি (আইনজীবী) পড়তে ভুলে গেছেন, তার মক্কেলকে ফোন করার পর ফোন না ধরায় খুদে বার্তা (এসএমএস) দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অভিযোগ ও অভিযুক্ত জায়গাটি যে সঠিক সে বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল ফোরকান আহমেদের স্পষ্ট বক্তব্য প্রতিবেদনে রয়েছে। ভূমিদস্যু হিসেবে চিহ্নিত ফেরদৌস নিজেকে পরিবেশপ্রেমী বলে দাবি করলেও পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে চলতি বছরের শুরুতে তার বিরুদ্ধে লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদফতর।’

একই কথা বলেন প্রথম প্রতিবেদনে সহযোগী আলোকিত কক্সবাজার অনলাইনের সম্পাদক ও প্রকাশক ওয়াহিদ রুবেল এবং সমুদ্রকন্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদক জসিম উদ্দিনও।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে দুই কিলোমিটার দূরত্বে গড়ে ওঠা রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী উত্তর মুহুরীপাড়ার তিন ফসলি জমিতে বাণিজ্যিক চিন্তায় ‘আবাসন প্রকল্প’ গড়তেই আইন উপেক্ষা করে রাতে-দিনে কৃষি জমি ভরাট করছে ভূমিদস্যু চক্র।

শতাধিক কৃষক পরিবারের একমাত্র অবলম্বন তিন ফসলি জমি ভরাট থেকে রক্ষায় জেলা প্রশাসক, কৃষি বিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন দেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনে ফসলি জমি ভরাট করে কোনো স্থাপনা বা আবাসন প্রকল্প বা শিল্প কারখানা গড়ে তোলার কোনো সুযোগ নেই। কক্সবাজার কৃষি বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন মাটি ভরাটের বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলেও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে প্রাথমিক কাজ বন্ধ করে দেয় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয় নিয়ে ১৩ মার্চ জাগো নিউজ ও ১৪ মার্চ (রোববার) ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনও। তারা ওইদিন সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত আবদুর রহমান ও কামরুল ইসলামসহ আরও অনেকে।

এদিকে, খবর চাপা দিতে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন পত্রিকা পাঁচ গুণ দামে কিনে নেন অভিযুক্তরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দোকানে এসে পত্রিকা না পেয়ে সৌজন্য কপি থেকে নিউজটি ফটোকপি করে নিয়ে গেছেন। এরপরই অভিযুক্তরা প্রকাশিত সংবাদে তাদের সম্মান আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে সংবাদ প্রত্যাহার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল অ্যাকশন নিতে আবদার করে আইনি নোটিশ দিয়েছেন।

জাগো নিউজ

সেন্সরশিপের খড়গ

স্বাধীন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, টিভি নাটক, মঞ্চ নাটকের উপর বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি সেন্সরশিপের তথ্য উপাত্ত দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।

বিস্তারিত

লেখার জন্য কারাবন্দী

ফেসবুকে লেখালেখির জন্য জেলে আছেন প্রচুর মানুষ। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন, আছেন এমন মানুষও। তাদের সম্পর্কে জানুন।
বিস্তারিত

বিচারহীনতার বাংলাদেশ

বিচার হচ্ছে না নিকট অতীতের কয়েকশ চাঞ্চল্যকর মামলার। যেসব মামলার সম্ভাব্য আসামী প্রভাবশালী রাজনীতিক অথবা ব্যবসায়ী অথবা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কেউ।

বিস্তারিত

এখন কী অবস্থায় আছে?

ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে ডজনখানেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো। সেসব গ্রাম, গ্রামের মানুষেরা এখন কেমন আছেন?
বিস্তারিত