জঙ্গি হামলায় শুদ্ধস্বরের প্রকাশক টুটুলসহ তিনজন মারাত্মক আহত

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার লালমাটিয়ায় অভিজিৎ রায়ের একজন বই প্রকাশকসহ তিনজনের ওপর হামলার ঘটনায় তাঁরা আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিকসহ এই তিন জনের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রথমে আঘাত করা হয় এবং পরে গুলিও চালানো হয়।

এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে পুলিশ জানিয়েছে। শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক আহমেদুর রশীদ টুটুলের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটেছে লালমাটিয়ায় প্রকাশনীটির অফিসে।

পুলিশ বলছে, সে সময় আহমেদুর রশীদের সঙ্গে ছিলেন তারেক রহিম এবং রণদীপম বসু। এরা সবাই লেখালিখির সঙ্গে জড়িত। শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে মার্কিন প্রবাসী লেখক অভিজিৎ রায়ের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। মি. রায় গত ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রীসহ ঢাকার বই মেলা থেকে বেরিয়ে বেরিয়ে হামলার মুখে পড়েন এবং ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত হন।

প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজন আহত হওয়ার পর তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আক্রমণকারীরা শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে ঢোকে বই কেনার নাম করে। এরপর তারা অতর্কিতে হামলা করে।

পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা জানান, তিনজনের ওপর হামলার ঘটনাটি ঘটে যে ভবনে, সেটি একটি পাঁচ তলা ভবন।

চতুর্থ তলায় পৌনে তিনটার দিকে হামলাকারীরা ঘটনা ঘটিয়ে অফিসটির দরজা বন্ধ করে চলে যায়।

এরপর আশেপাশের ফ্লাট থেকে পুলিশে খবর দেয়া হলে পুলিশ এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়।

হাসপাতালে আহতদের দেখে মহানগর পুলিশের শেখ মারুফ হাসান তাদের অবস্থা সম্পর্কে বলেন, মি. রহিমের ঘাড়ে, মাথায় আর দুই হাতেই আঘাত রয়েছে। এছাড়া, তাঁর কোমরে একটা গুলির চিহ্ন রয়েছে। বাকী দুজনের শরীরে আঘাত থাকলেও তুলনামূলকভাবে মি. রহিমের অবস্থা গুরুতর।

আহমেদুর রশীদ টুটুলই এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন বলে মনে করছেন প্রকাশনা জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

তার শুদ্ধস্বর থেকে অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল বলে তাঁরা বলছেন।

আহমেদুর রশীদ টুটুলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন আরেকজন লেখক শাহীন লতি।

তিনি বলছেন, অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তাকে হত্যা করা হবে, এমন হুমকি দেয়া হয়েছিল ।

তবে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণ ডায়েরি করার পর আহমেদুর রশীদ টুটুলের জন্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।

পুলিশ বলছে, এই তিনজনের ওপর কেন হামলা হয়েছে, তা কেবল তদন্ত শেষে বলা যাবে।

বিবিসি বাংলা

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা

৩১ অক্টোবর  বেলা আড়াইটার দিকে ওই ভবনের চতুর্থ তলায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হানা দেয় জঙ্গিরা। তারা কুপিয়ে আহত করার পর বাইরে তালা মেরে চলে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে তালা ভেঙে ঢোকে।

ভেতরে আটকা পড়া ওই তরুণ বলেন, “তারা (হামলাকারী) ছিল পাঁচজন। তারা ঢুকেই বলেছিল, ‘আমরা টুটুলকে মারতে এসেছি’।”

পুলিশ গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় টুটুল, ব্লগার তারেক রহিম ও লেখক রণদীপম বসুকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রণদীপম বসু ফেইসবুকে লেখেনঃ

“কুবাইছে (কুপিয়েছে), আমি টুটুল ভাই আর তারেক।”

রণদীপম বসুর ফেইসবুক স্ট্যাটাস

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ওই তরুণ বলেন, তাকেসহ অন্যদের অস্ত্রের মুখে পাশের কক্ষে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

“নক করা হলে দরজা খুলে দেওয়া হয়। একজন ঢুকে বলে যে সে বই নিতে এসেছে। তাকে ঢুকতে দিলে বলে, ‘আমার এক ভাই আছে’। এরপর দরজা খুললে তিনজন একসঙ্গে ঢোকে। এদের একজন স্বাস্থ্যবান। একজনের হালকা দাড়ি ছিল। যার হাতে পিস্তল ছিল, তার ১৬-১৭ বছর বয়স।”

“প্রথমে যে ঢুকেছিল তার কাছে কালো ব্যাগ ছিল। সেখান থেকে চাপাতি বের করে। আমাদের অন্য ঘরে জিম্মি করে রাখে। পরে কুপিয়ে তালা লাগিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় গুলির শব্দ শুনি।”

শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ের সামনে একটি টেইলার্সের দোকানের কর্মচারী  বলেন, “চিৎকার শুনে আমরা ওইদিকে খেয়াল করে দেখি একটি মোটর সাইকেলে করে তিনজন দ্রুত বের হয়ে যাচ্ছে।”

টুটুলের বন্ধু সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, “টুটুলের ফোন থেকে আড়াইটার দিকে ফোন আসে। আমি রিসিভ করি। তার কর্মচারী রাসেল আমাকে বলে, ‘আমাদের রক্ষা করেন। আমাদেরকে কুপিয়ে তালা মেরে চলে গেছে’। তখন আমি পুলিশকে জানাই।”

টুটুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার সঙ্গে আহত ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’সহ কয়েকটি বই বের করেছে শুদ্ধস্বর। প্রকাশক টুটুল লেখক অভিজিতের বন্ধু।

গত ফেব্রুয়ারিতে বইমেলার বাইরে প্রবাসী লেখক অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে জঙ্গিরা সংশ্লিষ্ট বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

অভিজিৎ নিহত  হওয়ার পর সরব হওয়ার মধ্যে ফেইসবুকে হত্যার হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে টুটুল মোহাম্মদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সেন্সরশিপের খড়গ

স্বাধীন বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, টিভি নাটক, মঞ্চ নাটকের উপর বিভিন্ন সময় সরকারি ও বেসরকারি সেন্সরশিপের তথ্য উপাত্ত দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।

বিস্তারিত

লেখার জন্য কারাবন্দী

ফেসবুকে লেখালেখির জন্য জেলে আছেন প্রচুর মানুষ। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়েছেন, আছেন এমন মানুষও। তাদের সম্পর্কে জানুন।
বিস্তারিত

বিচারহীনতার বাংলাদেশ

বিচার হচ্ছে না নিকট অতীতের কয়েকশ চাঞ্চল্যকর মামলার। যেসব মামলার সম্ভাব্য আসামী প্রভাবশালী রাজনীতিক অথবা ব্যবসায়ী অথবা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা কেউ।

বিস্তারিত

এখন কী অবস্থায় আছে?

ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে ডজনখানেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো। সেসব গ্রাম, গ্রামের মানুষেরা এখন কেমন আছেন?
বিস্তারিত